২০ লাখ টাকার পলিথিন হাউজ নির্মাণের অনুমোদন
‘ক্লাইমেট স্মার্ট’ কৃষিতে সফল হাটখোলার খিজির
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১০:৫৪ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স :
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়া ‘ক্লাইমেট স্মার্ট’ কৃষিতে আগ্রহ ছিল হাটখোলার পাইকরাজ গ্রামের খিজির আহমদের। কৃষিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন এ যুবক। তার উৎসাহ ও উদ্দীপনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসে উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন।
ক্লাইমেট কৃষি প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছেন জাঙ্গাইল বিএসএল (বিল্ডিং সিকিউরড লাইভলিহুড) সবজি উৎপাদক দলের সভাপতি খিজির। একনিষ্ঠভাবে কাজ করে কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা তিনি। কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ভিশন ছাড়াও সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। কোকো-পিটের মাধ্যমে আগাম টমেটো চারা উৎপাদন ব্যাপক সাড়া ফেলেন। তার সার্বিক কার্যক্রম দেখে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি’র সম্প্রসারণের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পলিথিন হাউজ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সিলেট সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আমাদের কৃষিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিজমির ক্ষুদ্রায়তন, কৃষি শ্রমিক-সংকট, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি। এ সব মোকাবেলা করে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট’ কৃষির যাত্রা শুরু করেছে সরকার। এ লক্ষে সিলেটেও বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’।
কৃষি কার্যক্রম প্রসঙ্গে খিজির জানান, স্বল্প আকারে পলি শেড তৈরি করে কোকো-পিটের মাধ্যমে আগাম টমেটো চারা উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সেই সাথে মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক বেগুন, টমেটো, পেঁপে, মরিচ ইত্যাদি চাষাবাদেও সফলতা এসেছে। তার এ কর্মকান্ডে ওই এলাকায় কৃষি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, আমার এলাকায় নিচু জমিগুলো বর্ষাকালের পানিতে তলিয়ে যায়। প্রায় অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডুবে থাকে এবং পরবর্তীতে আরো দুই তিন মাস পতিত থাকে। এ অবস্থায় প্রশিক্ষণের প্রাপ্ত জ্ঞানকে পুঁজি করে ও ক্লাইমেট কৃষি প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এলাকার পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের চিন্তাভাবনাই তাকে সফলতার মুখ দেখিয়েছে।
নিজের জমিতে মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক বেগুন, টমেটো, ক্যাপসিকাম, পেঁপে, মরিচ ইত্যাদি চাষাবাদ করে ভাল ফল পেয়েছেন। তার কার্যক্রমে এলাকার কৃষকদের মাঝেও নতুন কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তার অগ্রযাত্রার সারথি হিসেবে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সিলেট সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. ফজলে মঞ্জুর ভূইয়া বলেন, কৃষি বিষয়ে খিজিরের আগ্রহ আমাদেকেও অনুপ্রাণিত করে। প্রদর্শনী হিসেবে মাঝারী আকারের পলি সেড তৈরিতে উপকরণসহ ও আগাম ‘মঙ্গল রাজা’ জাতের টমেটো বীজ থেকে চারা উৎপাদন বেশ আকৃষ্ট করে। কৃষি প্রযুক্তির বিষয়গুলো সরজমিনে দেখতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে যশোরে পাঠায়। সিলেট সদর উপজেলায় একমাত্র খিজিরকেই প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পলিথিন হাউজ নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান।
সিলেট সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। কৃষির অগ্রযাত্রায় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পাইকরাজ গ্রামের খিজির ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় এগিয়ে এলে উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। কয়েকদিনের মধ্যেই ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পলিথিন হাউজ নির্মাণের উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ড. রুহুল আমিন সরকার বলেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন সিলেট অঞ্চলের হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে। এ লক্ষে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কৃষির আধুনিকায়নেও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।