দোয়ারাবাজারে এক মেডিকেল অফিসারেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১:৩০:২৪ অপরাহ্ন
তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে : জনবল সঙ্কট ও তদারকির অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের লক্ষীপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদে জনবল না থাকায় গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ শিশু, নারী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে চলছে সেবা কার্যক্রম।
পাকিস্তান আমলে চালু হওয়া লক্ষীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি লক্ষীপুর ইউনিয়নের ২৪ হাজার জনগোষ্ঠী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুরমা ও বোগলা ইউনিয়নবাসীও এখানে সেবা নিতে আসেন। কার্যত এ স্থানটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এখানকার সাধারণ মানুষ উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা নিতে হিমশিম খান। তাই, এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ওই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে এমবিবিএস ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়ক ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। ডাক্তার ছাড়াই শুধুমাত্র একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। হাসপাতাল আঙিনায় অবাধে বিচরণ করে গবাদিপশু, কুকুর ও বিড়াল।
স্থানীয়রা জানান,পাক শাসনামলে সিলেট জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে চলতো লক্ষীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। দেশ স্বাধীনের আগেও এখানে নিয়মিত নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তার। আর আজ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছর পরেও এখানে শুধুমাত্র উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মনিরুল ইসলামকে দিয়েই চলছে পুরো হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে রোগী দেখাসহ হাসপাতালের সার্বিক দেখভাল তিনি একাই করে থাকেন। কিন্তু, তিনি সরকারি কোনো কাজ, প্রশিক্ষণ বা ছুটিতে গেলে হাসপাতালটি বন্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে।
লক্ষীপুর গ্রামের মদরিস আলী বলেন, ‘এই হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে আছে, কারো নজরদারি নেই। এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে হাসপাতাল চালু রাখার কোনো সার্থকতা নেই।’
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক জহিরুল ইসলাম বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আমাদের হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগসহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
লক্ষীপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালে যোগদান করার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমি একাই এ হাসপাতালে আছি। দৈনিক ৪০-৫০ জন রোগী আসে। জনবল সংকটের কারণে আমাকে একাই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থেকে আগত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর চাহিদামাফিক প্রয়োজনীয় সমস্যার কথা জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহমদ হোসেন বলেন, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদে জনবল না থাকার বিষয়টি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জানানো হয়েছে। খুব শিগগির এখানে ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে।