‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১০:২৮ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বারবার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। একইসাথে বসন্তের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের আরেক নাম বাঙালি চেতনা। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। আজ পয়লা ফাল্গুন। ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। একেবারে দেশীয় সংস্কৃতির আলোয় উদ্ভাসিত এ দিনটি বাঙালি জীবনের একটি স্বতন্ত্র উৎসব বললেও ভুল হবে না। সুদীর্ঘকালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মিশে আছে ফাল্গুনের পরতে পরতে। আর সেই ঐতিহ্য আমাদের দেশীয় ঘরানার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে কালে কালে।
পলাশ কিংবা শিমুল গাছের সারি নেই শহরে। তবুও প্রকৃতির নিয়মে নগর জীবনে বসন্ত আছে। দূরে বৃক্ষের নির্জনে কোকিল ডেকে যায় অক্লান্ত। আজ বসন্ত সমীরণে রঙিন হয়ে উঠছে সবুজ বনভূমি। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। তবে বসন্ত শুধুু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন পুষ্পিত রক্তের স্মৃতির ওপরও রং ছড়ায়। একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তাইতো ফুল পাখির আবহে ফাগুনের প্রথম দিনে আজ তারা মিলিত হবেন মনকে বসন্তের রঙে রাঙিয়ে। প্রীতির বন্ধনে আপন মহিমায় খুঁজে নেবেন বসন্তকে। তারা বাসন্তী রঙের পোশাকে নিজেদের রাঙিয়ে নেবেন।
কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন- ‘হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে/ হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে/আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা/ দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে/ তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।’
বসন্তকে সামনে রেখে গ্রাম বাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজন ছিলো আমাদের আরেক ঐতিহ্য। শীতের সঙ্গে তুলনা করে সেই মেলায় থাকে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও। তবে বিশ্বায়নের যুগে সেই সংস্কৃতির অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে। হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিগুলো জাগাতে না পারলে আমরা চিরকাল থেকে যাবো আত্মপরিচয় সংকটে।