ফসলরক্ষা বাঁধ ধসে পড়েছে নদীতে, কৃষকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৭:২৬ অপরাহ্ন

বিশ্বম্ভরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : বিশ্বম্ভরপুরে বৃহৎ করচার হাওরের হরিমণের ভাঙ্গা ও বেকা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ দুইটি অংশ নদীতে ধসে গেছে। এঘটনায় করচার হাওরপাড়ের অর্ধলক্ষাধিক কৃষকের মধ্যে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে বাঁধ পূর্ব দিকে সরিয়ে দ্রুত নতুন স্থান দিয়ে করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মিলিয়ে করচার হাওরে ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার হেক্টর।
স্থানীয়রা জানান, হাওরের পশ্চিমাংশে ঘটঘটিয়া নদীর পাড়ের হরিমণের বাঁধ ও বেকা বাঁধ হাওরবাসীর জন্য প্রতিবছরই উদ্বেগের কারণ হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে এই বাঁধের বিশাল অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়ায় করচার হাওর ডুবে যায়। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালেও বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়। হাওরপাড়ের কৃষকদের প্রাণপণ চেষ্টায় রক্ষা পায় বাঁধটি। একইভাবে বেকা বাঁধও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। এবার দুই বাঁধেরই আধাআধি কাজ হতে না হতেই দুই অংশে ধস শুরু হয়েছে। হাওরপাড়ের রাধানগরের কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, বাঁধটি ধসে যাওয়ায় পুরো হাওরপাড়ের কৃষকদের মধ্যে দুশ্চিন্তার ভর করেছে। দ্রুত বাঁধ সরিয়ে মজবুতভাবে না করলে লাখো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান তিনি।
বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, বাঁধ কেবল পূর্ব দিকে সরালেই হবে না। নদীর পাড় ভাঙনও ঠেকাতে হবে। না হয় বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা থেকেই যাবে। গাছের বরলি দিয়ে পাইলিং করে ভাঙন ঠেকিয়ে বাঁধের কাজ করতে হবে। একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, মূল বাঁধের দুইটি অংশ নদীতে ধসে গেছে। এখন বাঁধ পূর্ব দিকে সরিয়ে যেভাবে মাটি দেওয়া হচ্ছে, সেভাবে মাটি টিকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাঁধ দুর্বল হয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। নদী পাড়ের ভাঙন ঠেকিয়ে যতটা সম্ভব সোজা করে মজবুত করতে হবে বাঁধ। দ্রুত কাজ শেষ করে বাঁশ দিয়ে জিও ব্যাগ লাগাতে হবে দুইটি ভাঙনেই।
জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এরই মধ্যে নদীতে ধসে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করেছেন। কী কারণে বাঁধ নদীতে ধসে গেল প্রতিবেদন দেবার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে দ্রুত মজবুত করে অন্য দিক দিয়ে বাঁধের কাজ শেষ করারও নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বললেন, বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কাজও দ্রুত নতুনভাবে করা হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বিষয়টিকে আমরাও গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কৃষকগণ উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা বাঁধটির দিক পরিবর্তন করে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। মাটির কাজ করার সময় ভালোভাবে কমপেকসন (বসানো) করা হবে। কমপেকসনে কোন ত্রুটি মেনে নেওয়া হবে না। বাঁশ, চট ও জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, এই বাঁধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ফোন দিয়েছেন। এরই মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। দ্রুত মজবুত করে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।