সৌদি আরবে দুর্ঘটনা
নছিরের পরিবারে অমানিশা, অন্ধকার দেশে ফিরে বিয়ে করা হলো না তেরা মিয়ার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৩:৪২:৩৭ অপরাহ্ন
লবীব আহমদ : পরিবারের হাল ধরতে ৩ মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান নছির উদ্দিন। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নছির ৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। পরিবারের কোনো জায়গা-জমি না থাকায় ঋণ করে বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠান তার বাবা। সেখানে ২ মাস বেকার থেকে কাজ শুরু করেন মাসখানেক আগে। ভাবছিলেন প্রথম মাসের বেতন পেয়ে বাড়িতে পাঠাবেন আর ধীরে ধীরে ঋণ শোধ করবেন।
তার আগেই সব স্বপ্ন মাটিচাপায় দুঃস্বপ্নে রূপ নিলো গোয়াইনঘাটের নছিরের। একই ঘটনায় নিহত হয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের তেরা মিয়া। অল্প দিনের মধ্যে দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা চলছিল তার। এখন এই দুই পরিবার জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায় সৌদি আরবের রিয়াদের বলিবার্ড এলাকার আলবাওয়ানী কাজের সাইটে কাজ করতে গিয়ে মাটিচাপায় ২ প্রবাসী বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেন। এসময় আরো ৪ জন আহত হন। তার মধ্যে ২ জনের অবস্থা গুরুতর। মারা যাওয়া নছির উদ্দিন (২৩) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের সুন্দাউরা গ্রামের মৃত তাহির আলীর ছেলে তেরা মিয়া (৩০)। গুরুতর আহত অপর ২ জন হলেন- গোয়াইনঘাটের আঙ্গারজুরের নুরুল আমিন ও কোম্পানীগঞ্জের রাজিব আহমদ।
তারা সৌদি আরবের কিং খালিদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের দুজনের আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তাদের স্বজনরা।
নছির উদ্দিনের ভগ্নিপতি এইচ কে শরীফ সালেহীন জানান, পরিবারের অভাব দূর করতে তিন মাস আগে নিজের বড় ছেলেকে প্রবাসে পাঠান নছিরের বাবা। বিদেশে গিয়ে সে প্রথমে বেকার থেকে কাজ পাওয়ার মাসখানেকের মাথায় মাটিচাপায় মারা যায়। তিনি বলেন, ভাবছিলেন বড় ছেলের দ্বারা তার পরিবারের অভাব মোচন হবে। সেই অভাব দূরীকরণের আগেই তাকে চলে যেতে হলো।
এদিকে তার বিদেশে যেতে গিয়ে করা ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তার বাবা, সেটা নিয়েও তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা। ঋণ শোধ করার জন্য যে জায়গা বিক্রি করবেন, সেটাও নেই। তার লাশটি দেশে আনার জন্য প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছে তার পরিবার।
অপর নিহত কোম্পানীগঞ্জের তেরা মিয়ার প্রতিবেশী সেলিম উদ্দিন জানান, তেরা মিয়া ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। আট বছর পূর্বে তিনি প্রবাসে পাড়ি জমান। নতুন ঘরবাড়িও তৈরি করেছিলেন। সামনের ঈদের পরে তার দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল। এমতাবস্থায় বৃহস্পতিবার একটি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তার লাশটি দেশে ফিরিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।