এক সাথে কাজ করবে লাফার্জহোলসিম ও সিলেট সিটি করপোরেশন
লালমাটিয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট উদ্বোধন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২:৪১:৫৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) এর প্লাস্টিক ও মিউনিসিপ্যাল সলিড বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বর্জ্য পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সিলেটের লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে এই প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি। এ সময় সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিুবর রহমান হাবিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরীসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে এটাই দেশের প্রথম ও একমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা করা সম্ভব হবে। এই প্ল্যান্টটি চালুর ফলে সিলেট নগরী প্লাস্টিক বর্জ্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করছে সিসিক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী সিসিক ও লাফার্জহোলসিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য টেকসই ব্যবস্থাপনা আমাদের দীর্ঘ দিনের চ্যালেঞ্জ। পুরো পৃথিবীই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে কঠিন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি লাফার্জহোলসিম এবং সিলেট সিটি করপোরেশন উভয় প্রতিষ্ঠানকে এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সাধুবাদ জানান।
সিলেট সিটি করপোরেশন এর মেয়র বলেন, “সিলেট সিটিকে একটি প্লাস্টিক মুক্ত নগরীতে রুপান্তর করা আমার অন্যতম লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যেই আমরা লাফার্জহোলসিম এর সাথে কাজ করছি। সিলেটবাসীর কাছে আমার অনুরোধ আপনারাও সচেতন হোন এবং প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার কমান। যেখানে সেখানে প্লাস্টিক পণ্য ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করবেন না। আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা দেশের প্রথম প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত নগরী হতে চাই।”
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিনটিকে মাইলফলক অর্জন উল্লেখ করে বলেন, “লাফার্জহোলসিম ছাতকে দেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ প্ল্যান্টে বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল পণ্য টেকসই উপায়ে কো-প্রসেস করছে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন এর অপনশীল প্লাস্টিক পণ্যগুলো আমরা কো-প্রসেস শুরু করতে যাচ্ছি। এর আগে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আমরা এক সাথে কাজ করেছি। ভবিষ্যতে সিলেট সিটি করপোরেশন এর আশেপাশের পৌরসভাগুলোকেও এই সুবিধা ব্যবহারে আমরা উৎসাহিত করবো।”
একটি গবেষণার তথ্য দিয়ে তিনি আরো জানান, ‘২০২৫ সালে বাংলাদেশে মোট বর্জ্যের পরিমাণ বছরে ২০ মিলিয়ন টন ছাড়াবে। গত তিন দশক আগেও এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন টন। বর্তমানে প্রতি দশ বছরে বর্জ্যরে পরিমাণ দ্বিগুণ হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই বর্জ্যের বড় একটা অংশ হলো প্লাস্টিক, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন মানুষ প্রতি বছর ৯ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে, অর্থাৎ ১৭ কোটি জনসংখ্যা হিসাব করলে মোট প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ১৬ লাখ টনেরও বেশি । যার পুরোটাই পরিবেশে ফেরত আসছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো টেকসই উপায়ে এই প্লাস্টিক পণ্যগুলো ব্যবস্থাপনা করা।”
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড-এর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে ছাতকে, যেখানে ক্লিংকার উৎপাদন করা হয়। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিমেন্ট প্ল্যান্টে ক্লিংকার তৈরির সুবিধা থাকায়-এই ধরনের প্ল্যান্টে টেকসই উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। জিওসাইকেল এমনই একটি টেকসই সমাধান। সারা বিশ্বে প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে হোলসিম গ্রুপ এই সুবিধা প্রদান করছে। বাংলাদেশে জিওসাইকেল এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১ লাখ টন বর্জ্য লাফার্জের জিওসাইকেল প্ল্যান্টে টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এর সক্ষমতা বছরে তিন লাখ টনে উন্নীত করতে যাচ্ছে লাফার্জহোলসিম।