নজর নেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের
বিনষ্ট হচ্ছে ৩শ’ বছরের পুরনো রাধামাধব আখড়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৯:৩৩:২৪ অপরাহ্ন
মো. নুরুল হক, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে : নানা ইতিহাস ঐতিহ্য আর পর্যটন সম্ভাবনায় ভরপুর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার ঐতিহ্য দেশব্যাপী সমাদৃত। উপজেলার দেখার হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলের মন কাড়ে। প্রাচীন থেকে শুরু করে মোঘল আমলের অনেক স্থাপনা রয়েছে শান্তিগঞ্জে। যা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় সবসময়। তেমনি একটি প্রাচীন স্থাপনা রাধামাধবের আখড়া।
৩শ’ বছরের পুরনো এই উপাসনালয়টি ইসকন মন্দির নামে পরিচিত। এটি উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের তালুকগাঁও গ্রামে অবস্থিত। ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সংস্কারের অভাবে অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। একসময় যে আখড়ায় নিয়মিত ভক্তদের আরাধনা হতো, শঙ্খ আর ঢাকের তালে কীর্তন হতো-আজ সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের। ৩শ’ বছরের অধিক পুরনো এই স্থাপত্যটি প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন হলেও এখনও দৃষ্টিতে পড়েনি সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের। এখনই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চিরতরে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভক্ত অনুরাগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩শ’ বছরের পুরনো এই রাধামাধবের আখড়াটি দেখভাল করছেন ইসকন অনুসারী। এক সময় মন্দিরের ভেতরে রাধামাধবের মূর্তিসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে বের করা হয়েছে সকল জিনিসপত্র। দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের ভেতরে পূজা অর্চনা বা কীর্তন করতে পারছেন না ভক্তবৃন্দ। দেয়ালের প্রলেপ খসে পড়ছে। দরজা জানালা ভেঙ্গে গেছে। অনেক স্থানেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদে একাধিক ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি ঝরছে মেঝেতে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সংস্কার না করলে একসময় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন মন্দিরের ভক্ত অনুরাগীরা। সংস্কারের পাশাপাশি মন্দিরটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন রাধামাধব আখড়ার দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
স্থানীয়রা জানান, পাথারিয়া রাধামাধবের আখড়া অনেক পুরনো। শান্তিগঞ্জ উপজেলা তথা সুনামগঞ্জের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। মন্দিরটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। শুধু রাধামাধবের আখড়াই নয়; শান্তিগঞ্জ উপজেলার এরকম আরও অনেক প্রাচীন স্থাপনা আছে যার কোন কদর নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই স্থাপনাগুলো।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন জানান, পুরনো এই স্থাপনাটি পরিদর্শন করেছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আখড়ার উন্নয়নে কাজ করব। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-যাতে এ প্রাচীন স্থাপনাটি নজরে এনে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা জানান, রাধামাধব আখড়া উপজেলার একটি সুপ্রাচীন স্থাপনা। স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্থাপনাটি তাদের আওতায় নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।