বৃষ্টির কারণে বন্ধ সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৬:০২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা: টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ফসলের জমিতে। বোরো মৌসুমে উপযোগী সময়ে বৃষ্টিপাত ফসলের জন্য সুফল নিয়ে আসলেও বৃষ্টির কারণে বন্ধ রয়েছে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময়। অন্যদিকে সময় মতো বাঁধের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে এই তথ্যে গড়মিল রয়েছে দাবি হাওর বাচাঁও আন্দোলনের নেতাদের। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের সুরক্ষা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষককূলে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃষ্টির কারণে জেলার চলমান ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে হাওরের বাঁধ এলাকা কর্দমাক্ত হওয়ায় চলাচল করতে পারছেনা মাটি বহনকারী ড্রাম ট্রাক। তাছাড়া দিনের বেলায় বৃষ্টি হওয়ায় চালানো যাচ্ছেনা মাটি কাটার মেশিন। আবহাওয়ার প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বাঁধ নির্র্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়ায় সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮০ ভাগ দাবি করা হলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও হাওরের সংগঠন বলেছে নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হতে পারে অর্ধেক কাজ। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্লোজারে কাজ শেষ না হওয়ায় ফসলের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হাওরের মানুষজন। অপরদিকে টানা বৃষ্টিপাতে ফসলি জমিতে সেচ সুবিধা হলেও অসমাপ্ত বাঁধের কাজ সমাপ্ত করা নিয়ে তৈরী হয়েছে দুটানা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ সমাপ্ত না করা গেলেও হাওর অরক্ষিত থাকবে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরে প্রবেশ করে ফসলহানি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত সময়ে বাঁধের কাজ সমাপ্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তাগাদা জানিয়েছেন হাওর পাড়ের কৃষকরা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার খাই হাওর পাড়ের কৃষক এনামুল হক বলেন, সরকার বাঁধের কাজের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। শুনেছি ২৮ তারিখের আগে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। বৃষ্টিতে মহাসিং নদীতে পানি বাড়ছে। যদি এভাবে বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে আমাদের জন্য খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।
উপজেলার দেখার হাওরের কৃষক সোবহান মিয়া বলেন, ছাইয়া কিত্তা ক্লোজারের মাটি ধসে গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগে এই বাঁধের কাজ শেষ না করা গেলে দেখার হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমি অরক্ষিত থাকবে।
এদিকে, সময় মতো বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন হাওর ও কৃষকের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলে আসছিলাম গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ করতে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বৃষ্টিপাত হবে। এটা সবার জানা। ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মপাশায় চন্দ্রসোনার তালা হাওরে পানি প্রবেশ করেছিল। তা থেকে কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নেননি। প্রতিদিন কাগজে কলমে বাঁধের কাজের অগ্রগতি বাড়ানো হয়েছে। বাস্তবে বাঁধের অর্ধেক কাজ এখনো বাকি। অনেক উপজেলায় সবে মাত্র কাজ শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ফসলের সুরক্ষা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গত ৩ দিনের বৃষ্টিপাতে বাঁধের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়েছে। কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। সাময়িকভাবে বাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত বাঁধের কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।