বারবার ভেস্তে যায় পুনর্বাসন উদ্যোগ: নতুন মেয়রের উদ্যোগ কি সফল হবে?
দুই সহস্রাধিক হকারের দখলে নগরীর ফুটপাত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৯:১১ অপরাহ্ন
নূর আহমদ :
সিলেট নগরীতে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা হকারদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এদের নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তা ভেস্তে যায়। সদ্য প্রাক্তণ সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বরাবরই কঠোর ছিলেন হকারদের বিরুদ্ধে। হকারদের কাছে আরিফ ছিলেন মূর্তিমান আতংক। অন্যদিকে হকারদের পুনর্বাসনেরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। নগর ভবনের পিছনে লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটকে ‘হলিডে মার্কেট’ করে দিয়েছিলেন। কার্যত সফলতা পায়নি তার এই উদ্যোগ। সেখানে বসাতে পারেননি হকারদের। নানা অজুহাতে পুনরায় সড়কে ছড়িয়ে পড়ে তারা। এবার হকার নিয়ন্ত্রণের নতুন মিশনে নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সেই লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটটিকে আরো আধুনিকায়ন করে হকারদের পুনর্বাসন করতে কাজ শুরু করেছেন। রমজানের আগেই তাদের নতুন মার্কেটে বসাতে চান মেয়র। অনেক ব্যবসায়ীর প্রশ্ন, নতুন মেয়রের হকার পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ কতদিন টিকবে, নাকি আগের মত অদৃশ্য ঠেকে যাবে মাঝপথে!
নগর ভবন সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান তার আমলে সিলেট নগরীর ফুটপাতের হকারদের প্রথম তালিকা করেন। তখন হকারদের সংখ্যা ছিল ৫শ’। ওই সময়ে নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রি মাঠে অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দিয়ে কিছু হকারকে পুনর্বাসনের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু সুফল পাননি। বরং দিন দিন বাড়তে থাকে হকারের সংখ্যা।
অন্যদিকে, সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ফুটপাত দখলমুক্ত করা। বিশেষ করে সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রধানতম দাবি ছিল এটি। ফুটপাত থেকে হকারদের হটাতে ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য সংগঠন আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। আরিফুল হক চৌধুরী ফুটপাত হকারমুক্ত করার ইস্যু নিয়েই সাড়া ফেলেন নগরে। নির্বাচিত হন মেয়র হিসেবে। এরপর মনোযোগ দেন হকার উচ্ছেদে। কিন্তু উচ্ছেদ করতে গিয়ে উল্টো বাধার মুখে পড়েন। প্রশাসনের অসহযোগিতা ও রাজনৈতিক কারণে তিনি বার বার বাধার মুখে পড়েন। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশনাও হয় উপেক্ষিত। এমনকি হকাররা নগর ভবনেও হামলা করে ভাংচুর করেছিলো।
অপরদিকে, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী একদিকে উচ্ছেদ; অন্যদিকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরপর হকার নেতাদের সহায়তা নিয়ে ২০২১ সালে নগরীতে হকারদের তালিকা করে নগর ভবন। তখন হকারদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৬শ’ জনে। ওই সময় আরিফুল হক চৌধুরী হকারদের জন্য লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠ বরাদ্দ দিয়ে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নাম দেয়া হয়েছিল ‘হলিডে মার্কেট’। কিন্তু মাঠের সংস্কার করে না দেয়া এবং ক্রেতা সংকট দেখিয়ে ফের হকাররা ঐ মাঠ ছেড়ে ফুটপাথে চলে আসতে শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এর আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় নগর ভবন থেকে তদারকির অভাবে পুরো নগরীর ফুটপাত দখলে নিয়েছে হকাররা। স্কুল কলেজ থেকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালতের সামনে দিনে রাতে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে হকাররা। অভিযোগ রয়েছে, তারা পুলিশ ও সরকারদলীয় প্রভাবশালীদের নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ফটুপাতে ব্যবসা করে আসছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি সিলেটের ব্যবসায়ীরা হকার উচ্ছেদে নতুন মেয়রকে আল্টিমেটাম দিলে নড়েচড়ে বসে নগর ভবন। এরপরপরই হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টি সামনে আসে।
নগর ভবন সূত্র জানায়, সর্বশেষ বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আগামী রমজান মাসের আগে সিলেট নগরীকে হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে নগর ভবন হকার নেতাদের সহায়তা নিয়ে ফের হকারদের তালিকা করেছে। এই তালিকায় আরও ৪শ’ হকার বেড়েছে। সবমিলিয়ে এখন দুই হাজার হকারকে পুনর্বাসন করতে হবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে।
সিলেট নগর হকার ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুল রকিব জানান, দিন দিন হকার বাড়ছে। কিছু হকার পেশা বদল করেছে, কেউ বিদেশে চলে গেছে। তাই আমরা পুরনো তালিকা হালনাগাদ করছি। একই সাথে পূর্বের তালিকার সঙ্গে নতুন আরও ৪শ’ হকার যোগ হচ্ছে। মেয়রের নির্দেশে এই হালনাগাদ তালিকা তৈরী হচ্ছে। লালদিঘীরপাড় হকার মার্কেটের মাঠে সবার স্থান হয়ে যাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। এর বাইরে আর কোন হকারকে ফুটপাতে বসতে দেয়া হবে না বলে এই হকার নেতা দাবি করেন।
এদিকে, হকারদের জন্য নির্ধারিত স্থান লালদিঘীরপারস্থ অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন সিসিকের নতুন মেয়র। তিনি বলেন, আসন্ন রমজানের আগেই নগরীর ভ্রাম্যমাণ হকারদের অস্থায়ী মার্কেটে পুনর্বাসন করা হবে। এর আগে একাধিকবার হকারদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত কোন কাজে আসেনি। আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আশা করছি, হকারদের নির্ধারিত স্থানে পুনর্বাসন করে নগরবাসীকে যানজট ও ফুটপাতমুক্ত শহর উপহার দিতে পারবো।
মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আরো জানান, শেড নির্মাণসহ মার্কেটের সংস্কারের জন্য ১০টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্টন করে দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে এবং সিলেটবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে। একটি সুন্দর শহর নির্মাণ করতে সবার আগে নগরবাসীর সহযোগিতার প্রয়োজন। তাদেরকে নিয়েই আমি একটি ‘গ্রিণ, ক্লিন, স্মার্ট সিলেট’ নির্মাণ করবো।