জাল টাকা রোধে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
সিলেটের হাট-বাজারগুলোতে সক্রিয় জাল টাকা কারবারীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৫:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স :
রমজানকে সামনে রেখে এবারও সিলেট অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার কারবারীরা। এই চক্র আগে কেবল নগরীতে সক্রিয় থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা পর্যায়ের হাট-বাজারগুলোতেও। গত কয়েকদিনে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে চার জাল টাকার কারবারী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ জাল টাকার নোট।
বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। এ ব্যাপারে আগামী ৪ মার্চ সিলেট অঞ্চলের সকল ব্যাংক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সভার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুল হাফিজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শ হচ্ছে, টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। তবে, নজরদারি বাড়িয়ে বিশেষ তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এ্যাডমিন এন্ড ফাইন্যান্স) জেদান আল মুসা। তিনি আরো জানান, জাল টাকা কারবারীদের পাকড়াওসহ ব্যাংকিংখাতের নিরাপত্তায় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাল টাকার কারবারীদের ঘিরে জাল গুটিয়ে আনা হচ্ছে। শীঘ্রই আরও অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থেকে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম ও জাল নোটসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একহাজার টাকা মূল্যমানের ৪৮০টি জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া, গত সোমবার শ্রীমঙ্গল থেকে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও ভারতীয় রুপিসহ যুগেন্দ্র মল্লিক নামে একজনকে আটক করেন র্যাব সদস্যরা। এর আগের দিন রোববার জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার এলাকা থেকে জাল টাকার নোটসহ রুজেল মিয়া নামে একজনকে আটক করে পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছেড়ে আসছে। এই চক্রের সদস্যরা জাল টাকার নোটগুলো আসল টাকার বান্ডিলে মিলিয়ে লেনদেন করে সহজ সরল মানুষকে নি:স্ব করে দিচ্ছে। জাল নোটগুলো এতোই নিখুঁত যা শনাক্ত করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া, কয়েকটি আসল নোটের সঙ্গে একটি জাল নোট দিলে তা দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমেদ বলেন, একটি দুষ্কৃতকারী চক্র জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এদের রুখতে না পারলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গোটা দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। বিষয়টির ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুল হাফিজ আরো জানান, সিলেট অঞ্চলে জাল টাকার কারবারীরা সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মাসে তিন-চারটি মামলা ও আলামত বাংলাদেশ ব্যাংককে আদালত থেকে অবগত করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৪মার্চ সিলেট অঞ্চলের সকল ব্যাংক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এছাড়া, জাল টাকা প্রবেশ রোধে আসল নোট চেনার উপায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার জুড়ি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংক সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক সাখাওয়াত হোসেন জানান, জাল টাকা প্রতিরোধে জনতা ব্যাংক সোচ্চার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ক্যাশ অফিসারদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। তাছাড়া, জাল নোট প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জাল টাকার বিস্তার রোধে পুলিশ সবসময় তৎপর হয়ে কাজ করছে। যেহেতু সামনে রোজা ও ঈদ। তাই, আমাদের বাড়তি নজরদারি রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই এই চক্রের অনেক সদস্যকে আটক করেছি। আরো অভিযান পরিচালিত হবে বলেও জানান তিনি।