উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার এক বছরেই বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়কে ভাঙন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারে অর্ধশত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নানা টালবাহানার পর গেল শুকনো মৌসুমে উন্নয়ন কাজ শেষ হলেও বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সড়কটিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশ্বনাথ অংশের গর্তগুলো জোড়াতালির প্রলেপ দিয়ে ভরাটের পর এবার জগন্নাথপুর অংশেও গর্ত ভরাটের কাজ চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ইচ্ছে অনুযায়ী লুটপাট করা হয়েছে। যে কারণে বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। তারা বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
সড়কের বহু জায়গায় গর্ত সৃষ্টির বিষয়টি খোদ এলজিইডির জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হাসান সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, হবিবপুর ও লুদরপুরে দুটো স্থানে ভেঙে গেছে। দুটি ব্রিজের এপ্রোচও দেবে যায়। এ সকল স্থানসহ যে সকল জায়গা নেমে গেছে এগুলো আপাতত সংস্কার করা হচ্ছে। তবে, এখনো পুরোপুরি সংস্কার করতে আলাদা কোনো প্রকল্প অনুমোদন আসেনি। ভেঙে যাওয়া অংশের সংস্কার করতে গত আগস্টে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল।
আর এলজিইডি বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ বলেন, সড়কের যে সকল স্থানে গর্ত তৈরি হয়েছিল; এগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্ধশত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙ্গে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নিঃসন্দেহে এখানে সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট হয়েছে মর্মে তার ধারণা। দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বিষয়টির তদন্ত করা জরুরি। এর জন্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তাসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মন্তব্য তার।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক সড়কটির উন্নয়ন কাজ গেল বছর সম্পন্ন করা হয়। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সড়কের জগন্নাথপুর অংশের লুদরপুর নগর মাতৃসদন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সামনে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। একইভাবে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে হবিবপুর গ্রামের অভ্যন্তরেও। এছাড়াও বড়কাপন ব্রিজের পূর্ব পাশে ও ভবেরবাজার ব্রিজের পশ্চিম দিকে সড়কের একপার্শ্ব দেবে যায়। গেল এক বছর ধরে এভাবে সদ্য উন্নয়ন হওয়া সড়ক ভেঙে গেলেও মুখে কুলুপ এঁটেছে এলজিইডি। সড়ক সংস্কার দূরে থাক নতুন সংস্কার হওয়া সড়ক ভেঙে গেছে-এমনটি বলতেও নারাজ কর্মকর্তারা।
সড়কের উন্নয়ন কাজ চলাকালেই জগন্নাথপুর উপজেলা অংশের মিরপুর বাজারের পশ্চিমের ছোট ব্রিজের এপ্রোচও দেবে যায়। একইভাবে দেবে যায় ইসহাকপুর ব্রিজের এপ্রোচ। ইসহাকপুর হাইস্কুলের সামনে রাস্তার একপার্শ্ব পুরোপুরি দেবে গিয়েছিল। রতিয়ারপাড়ায় ভেঙে যায় সড়কের একাংশ। পরে দেবে যাওয়া স্থান সংস্কার করা হয়।
২০২২ সালের বন্যায় সড়কে কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে গেল শুকনো মৌসুমে পুরো সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এরপর এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আবারও নতুন সংস্কার করা সড়কে ভাঙন শুরু হয়। সম্প্রতি জগন্নাথপুর অংশের গর্ত ও ভাঙাচোরা জায়গা ভরাট করার উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। এজন্যে গর্তগুলোতে ইটের সুরকি ফেলা হয়। তবে, যে ইটের সুরকি ফেলা হয়েছে তা মানহীন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
সড়কটির বিশ্বনাথ অংশের পীরেরবাজারের পশ্চিমে, রায়কেলি মসজিদের সামনে, আটঘরসহ বহু জায়গায় ছোটবড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়। টানা ছয়মাস ভাঙাচোরা এসকল গর্তের উপর দিয়েই যানবাহন চলাচল করে। এরপর গত জানুয়ারি মাসে কোনোরকমের জোড়াতালি দিয়ে গর্ত ভরাট করে এর উপরিভাগে দেয়া হয় প্রলেপ। এখনো এ সকল জায়গায় যাত্রী সাধারণকে বহু ঝাঁকুনি খেতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ করায় সড়কের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সড়কের মধ্যে কংক্রিট ফেলার পর কংক্রিট বসার জন্যে সময় দেয়া হয়নি। তাড়াহুড়ো করে কার্পেটিং করার ফলে কার্পেটিং উঠে যায়। এলজিইডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কাজের মানের প্রতি খেয়াল না দেয়ায় নিম্নমানের কাজ করেই দায়িত্ব শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বনাথ বাজার থেকে জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার। এই সড়কের সংস্কারে সর্বপ্রথম ৪৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। এর মধ্যে জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটারের জন্যে ২৫ কোটি ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা এবং বিশ্বনাথ অংশের ১৩ কিলোমিটারের জন্যে ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৭১ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই হিসেবে প্রতি কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্যে দেয়া হয়েছিল ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকারও বেশি। পরবর্তীতে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছিল।