এবার ‘অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা’র স্ট্যান্ড উচ্ছেদের দাবি
কতদিন এমন দখলমুক্ত রাখা যাবে সড়ক ও ফুটপাত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১১:১৮:১৪ অপরাহ্ন
নূর আহমদ:
সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশেষে সিলেটের সবকটি ফুটপাত হকারমুক্ত করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। তাতে রীতিমতো বদলে গেছে সিলেটের চিরচেনা দৃশ্য। তবে প্রশ্ন উঠেছে ‘কতদিন এমন দখলমুক্ত রাখা যাবে সড়ক ও ফুটপাত।’ নগরবাসীর দাবি হকার প্রশ্নে আর ছাড় নয়, আরো কঠোর হতে হবে নগর ভবনকে। অন্যদিকে, ফুটপাত দখলমুক্ত করে প্রশংসায় ভাসছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তবে এবার দখলমুক্ত হওয়া সড়ক ‘অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা’র দখল থেকে মুক্ত করার দাবি নগরবাসীর।
সিলেট নগরীর হকার উচ্ছেদের দাবি দীর্ঘদিনের। এর প্রেক্ষিতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতের হকারদের আগে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ফুটপাত হকারমুক্ত করতে নামে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। নগর ভবনের পেছনের দিকে নগরীর লালদিঘিরপার এলাকায় প্রায় চার একর জায়গায় হকারদের পুনর্বাসনের জন্য অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করে নগর কর্তৃপক্ষ। যেখানে আড়াই হাজার হকার একসঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন। অস্থায়ী মার্কেট তৈরির পর সেখানে হকারদের আসার আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার দুপুর থেকে অভিযানে নামে সিসিক। এরপর থেকে আর সড়কে দেখা মিলছে না হকারদের। রোজার শুরুর প্রথম দিন থেকে ৫ম দিন পর্যন্ত ফুটপাতে কোনো হকার দেখা যায়নি। নগরীর আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কোর্টপয়েন্ট, বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সবগুলো ফুটপাতই হকার মুক্ত। হকারমুক্ত হওয়ায় নগরীর অসহনীয় যানজটের তীব্রতাও নেই। এ যেন এক অন্যরকম নগরী। তবে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশাগুলো ফুটপাত দখল করে বসে আছে।
লালদিঘিরপার অস্থায়ী মার্কেটে গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ৩শতাধিক হকার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মাছ, সবজি থেকে শুরু করে জামাকাপড়, জুতাসহ সব ধরনের পণ্য নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য নতুন বাজার হিসেবে ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা-সম্ভাবনা দুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ নতুন জায়গায় ব্যবসা জমে উঠার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে অনেকেই বলছেন ‘ফুটপাতে যে বিকিকিনি হয় তার চার ভাগের একভাগও এখানে করতে পারা যাচ্ছে না।’ এরজন্য সাধারণ ক্রেতাদের বাজারমুখী করার উপর জোর দেন তারা।
রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, ২০০১ সাল থেকে তিনি নগরীর ফুটপাতে বাচ্চাদের কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। এবার নতুন জায়গায় গিয়ে তিনি ধাক্কা খেয়েছেন। তিনি বলেন, রাস্তায় চলতে চলতে মানুষের একটা জিনিস ভালো লেগেছে কিনে নিয়েছে। এখানে তো প্রয়োজন হলেই কেবল আসবে-নইলে না। তিনি বলেন, এখানেও ব্যবসা হবে না এমন নয়, তবে কেউ ফুটপাতে ব্যবসা করবে আবার কেউ হকার মার্কেটে ঢুকে লোকসান গুনবে তা যেন না হয়। যে কোন এক নিয়মে চলতে হবে।
কিনব্রিজের মুখে ব্যবসা করতেন বিজন রায়। তিনি বলেন, নতুন জায়গায় এসেছি, এখানে কি হবে বুঝতে পারছি না। তবে আশা করি সব হকাররা যদি নিয়মিত বসেন তবে ব্যবসা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘এখানে একটু সম্মান দেয় কাস্টমার। রাস্তায় ৩০০ টাকা বললে কাস্টমার ৬০ টাকা বলে। এখানে একটু সম্মান দিয়ে দেড়শ’ বলে।
শরিফ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, রমজান মাস এমনিতেই লোকজন কম বের হন। এরজন্য ক্রেতা সাধারণও কম। দেখি রমজান পরে ব্যবসা কেমন হয়।
আবিদুল ইসলাম নামের অপর একজন ক্রেতা বলেন, সাধারণ লোকজন ফুটপাত থেকে কেনার পক্ষে নয়, সবাই বাজারে বসুক, একদিন সব ক্রেতাই প্রয়োজনে এই বাজার আসবে। তিনি নগর ভবনকে কঠোর থাকার আহবান জানান।
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমি সন্তান বাংলাদেশ এর সংগঠক শুয়াইবুল হাসান বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ফুটপাত সাময়িকভাবে দখলমুক্ত হতে দেখেছি। পরে একই চিত্র। তাই শঙ্কা থেকেই যায়। নতুন মেয়র ক্লিন সিটি করার যে স্বপ্ন সিলেবাসীকে দেখাচ্ছেন আশা করব তিনি তা বাস্তবায়নে এই সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হবেন। শুয়াইবুল হাসান আরো বলেন, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত হলেও এবার চলে যাচ্ছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার দখলে। এবার সেদিকে নজর দেয়া জরুরি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লালদীঘীরপার মার্কেট উদ্বোধনের দিন বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছোট ব্যবসা করে তাদের পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছেন। তারা চুরি-ডাকাতি করেন না। এ জন্য তাদের সম্মানের চোখে দেখতে হবে। হকাররা শুধু হকার নন, আমাদের ভাই আমাদের পরিজন। তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’ ফুটপাত স্থায়ীভাবে দখলমুক্তর রাখতেই এই পুনর্বাসন কার্যক্রম আগে করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড এর ব্যাপারেও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান।