সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামবে কি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৪, ৪:৩৮:২৩ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম :
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানোর কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। এ কারণে এ সড়কে প্রায়শ ঘটছে মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা। গতকাল সোমবার দুপুরে এ মহাসড়কে পাত্র সম্প্রদায়ের নারী-শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যুর পর সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে এসেছে। এ সড়কে চলাচলকারী ভুক্তভোগীদের বক্তব্য-এ মহাসড়কে প্রাণহানির দায় সংশ্লিষ্টতা কি এড়াতে পারবেন হাইওয়ে পুলিশ?
সিলেট রিজিওনের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে, বেপরোয়া গতির কারণে সোমবারের দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাঁর মতে, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অনেকটা অপ্রশস্ত, রাস্তায় অনেকগুলো বাঁক রয়েছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশে অনেক নির্মাণ হচ্ছে স্থাপনা। যে কারণে জাতীয় মহাসড়কের সাথে এ সড়ককে তুলনা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দুর্ঘটনারোধে স্থানীয় জনগণকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে রাস্তায় ফিটনেটবিহীন ও লক্কর-ঝক্কর মার্কা যান চলাচল বন্ধে স্থানীয় জনগণ পুলিশকে সহযোগিতা দিতে হবে।
তিনি বলেন, এ রুটে দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ আজ মঙ্গলবার থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নিয়েছে। অতিরিক্ত গতির যানবাহন বন্ধ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক শনাক্ত এবং রুট পারমিটবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের দুটি ইউনিট আজ থেকে ওই রুটে অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানান তিনি। এ রুট এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ সড়কে দুর্ঘটনা রোধ করা অনেকটাই কঠিন হবে বলে তার মন্তব্য। এরপরে এ ব্যাপারে তাদের প্রচেষ্টার ত্রুটি থাকবে না বলে জানান তিনি।
সিলেট-তামাবিল সড়কে রুট পারমিটবিহীন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক-হেলপাররা লেগুনার স্টিয়ারিংয়ে বসে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, এ রুটে তুলনামূলক বেশি পরিমাণ লেগুনা চলাচল করে। অনেক লেগুনা আবার লক্কর-ঝক্কর মার্কা। এ বিষয়ে তামাবিল হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইউনুস আলীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আঞ্চলিক মহাসড়কে রেজিস্ট্রেশনকৃত লেগুনা চলাচলের অনুমতি আছে। সকল সড়কের কিছু অবৈধ যানবাহন চলাচল করে এটা স্বীকার করে তিনি বলেন, বেপরোয়া গতির যানবাহন এ সড়কে অনেকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এ হাইওয়েতে গত ২ মাস আগে তিনি যোগদান করেছেন উল্লেখ করে বলেন, এ সময়ে তিনি লেগুনার কোন দুর্ঘটনা পাননি। সোমবার সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে লেগুনা দুর্ঘটনায় ৬ জনের প্রাণহানি হয় বলে জানান তিনি।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম জানান, সিলেটের জনৈক ব্যক্তির গরু দরবস্ত বাজার থেকে পিকআপে করে হরিপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দ্রুতগতিতে পিকআপ চালানোর কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি। যে কারণে সোমবার স্বল্প আয়ের গ্রাম পুলিশ পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের প্রাণহানি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক ফারুক আহমদ বলেন, জৈন্তিয়া চোরাচালানের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। চোরাচালানে ব্যবহৃত যানবাহনের বেপরোয়া গতিই দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী বলে তার মন্তব্য।
ওই এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না।
দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বিপজ্জনক বাঁক :
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং অংশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বাঁক। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাসেসমেন্ট না হলেও এ সড়কের জৈন্তাপুর-জাফলং অংশে অন্তত ১৫টি বাঁক রয়েছে। এসব বাঁক খুবই দুর্ঘটনাপ্রবণ।
জৈন্তাপুরের সাংবাদিক নূরুল ইসলাম জানান, সিলেট-তামাবিল সড়কে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আড়াই মাসে যত প্রাণহানি :
সোমবার ৬ জনের মৃত্যুর আগে গত ৫ মার্চ রাতে সিলেট-তামাবিল সড়কে ডিআই পিকআপের ধাক্কায় -জৈন্তাপুরের বাউরবাগ গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. লিয়াকত আলীর ছেলে ফয়সাল রেজা (১৯) ও একই উপজেলার মোকামবাড়ি গ্রামের সৈয়দ শিহাব আহমদ (২২) মারা যান। এর আগে ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার দিকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে প্রাইভেট কার খাদে পড়ে আরো ৪ ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন।