সরিষায় ভাগ্য ফিরাচ্ছেন হাওরের কৃষকরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৪, ৪:৪২:১৪ অপরাহ্ন
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ থেকে : ধান চাষাবাদের চেয়ে সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় সুনামগঞ্জে সরিষা উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। সুনামগঞ্জের আবহাওয়া ও পরিবেশ সরিষা উৎপাদনে উপযোগী হওয়ায় সফলতার মুখ দেখছেন অনেক চাষী। জেলার সুনামগঞ্জর সদর, বিশম্ভরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় সরিষা উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষক বিভাগ। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে বিভিন্ন উপজেলার ২০ হাজার কৃষক ৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেন। যেখান থেকে ফলন হয়েছে ৫ হাজার ৪’শ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৬৫ কোটি টাকা। গতবারের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে সরিষা। বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের কৃষক আমজদ আলী জানান, আগে জমিতে বোরো ধান লাগাতেন। তবে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে বেঁছে নেন সরিষার আবাদ। নিজের প্রায় ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষাবাদ করে আয় করেছেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
এভাবেই ধানের পরিবর্তে সরিষার চাষে ঝুঁকছেন সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। ব্যয়ের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় বোরো ও আমন ধানের পাশাপাশি সরিষার আবাদে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ, আবার সরিষার চাষাবাদের ফলে হাওরে বেড়েছে মধুর চাষ। কৃষক আমজদ আলী জানান, আগে আমি বেশি বোরো ধান লাগাতাম এখন কৃষি অফিসারের পরামর্শে তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সরিষার আবাদ করেছি। আমার খরচের চেয়ে আয় হয়েছে তিনগুণ। এখন থেকে আমি সরিষার চাষাবাদই করব। এদিকে, মধ্যনগর উপজেলায়ও বেড়েছে সরিষার চাষাবাদ। এ উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪২ শতাংশ সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪ ইউনিয়নে গত বছর সরিষা চাষ করা হয়েছিল ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর এই ৪ ইউনিয়নেই সরিষার চাষ করা হয়েছে ৪৯৭ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। সরিষা চাষী আনোয়ার হোসেন জানান, ফসলে পোকার আক্রমণ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় দেখা না দেয়ায় এবছর অনেক ভালো ফলন পেয়েছি। আমি লাভবান হয়েছি সরিষা চাষে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, বোরো ধানের পাশাপাশি কৃষকরা সরিষার চাষাবাদ করতেই পারেন। যার জন্য আমরা তাদের উৎসাহ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এবছর সুনামগঞ্জ থেকেই ৬৫ কোটি টাকার সরিষার আবাদ হয়েছে। এছাড়া সেই সরিষা থেকে ৯১০ লিটার মধু পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা।