মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে
সিলেটে একসাথে চৌদ্দ শতাধিক মানুষের ইফতার
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২৪, ৪:২৪:১৭ অপরাহ্ন

আহমাদ সেলিম :
বিকেলের আলো নিভু নিভু। সন্ধ্যা নামার অনেক বাকি। এমন সময় চৌদ্দ থেকে পনেরো শ’ মানুষ জড়ো হন রিকাবীবাজার সিলেট জেলা স্টেডিয়াম ফটকে। তারপর ধিরে ধিরে সবাই প্রবেশ করেন মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামের ভেতর। তবে খেলার জন্য কিংবা খেলার দর্শকও নন তারা। এসেছেন ইফতার করতে। প্রতিদিন বিকেলে এভাবেই তারা একইস্থানে আসেন, ইফতার করেন। এতগুলো মানুষকে একসাথে ইফতারের এমন গণজমায়েত সিলেটে আগে কখনো চোখে পড়েনি। মূল ফটকে আয়োজক হিসেবে জেলা ক্রীড়া সংস্থা নাম দেয়া হলেও সম্পূর্ণ নিজের অর্থে সেটি করছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম।
ইফতারের কিছু সময় পূর্বে জিমনেসিয়ামের ভেতর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো বিশৃঙ্খলা নেই, কোলাহল নেই। অদ্ভুদ এক নীরবতায় সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো ইফতার সামনে রেখে প্রভুর আদেশের অপেক্ষায় বসে আছেন। আবার যে খাবারের সামনে বসে আছেন, সেগুলো অতি সাধারণ কিংবা নামমাত্র খাবারও নয়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সময় শৃঙ্খলা বজায়ে ব্যস্ত থাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিস সেক্রেটারি বিপুল তালুকদারের সঙ্গে কথা হয়। ইফতারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে এখানে রোজাদাররা চলে আসেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশু, অনাথ, প্রতিবন্ধী, রিকশাচালক, খেটেখাওয়া, ভবঘুরে মানুষগুলোই আসেন।
খিচুড়ি নয়, হোটেল রেঁস্তোরা থেকে কিনে আনা খাবারও নয়। প্রতিদিন বাসা থেকে আলাদা বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা আখনি তাদের মধ্যে পরিবেশন করা হয়। সেই আখনি চিনিগুঁড়া ও কোন কোনোদিন কাটারীভোগ চাল দিয়ে তৈরি হয়। খাবারের তালিকায় একদিন মুরগি হলে আরেক দিন গরু কিংবা খাসির গোস্ত থাকছে নিয়মিত। আখনি ছাড়া আরো থাকে বাহারী মুখরোচকের সমাহার। খেজুর, পিঁয়াজু, জিলাপি, ছোলা, সালাদ তো আছেই। তৃষ্ণা মেঠাতে পানির সাথে রাখা হয সুস্বাদু শরবত।
আমাদের সমাজে এমনও মানুষ আছে যারা শুধু মুড়ি কিংবা পানি দিয়ে ইফতার করেন। সেই মানুষগুলোর ভাগ্যে এমন ভালো এবং উন্নত খাবার সবসময় জুটে না। তাই তারা খুশি। শুভকামনা করেছেন, দোয়া করেছেন মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম এর জন্য।
ইফতারের সময় দেখা হয় আলী হোসেন নামে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর সাথে। চোখে মুখে একধরনের সন্তুষ্টি নিয়ে তিনি কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বলেন, রোজার শুরু থেকে এখানে আসছি। যা দিয়ে ইফতার করছি সেগুলোর ঘ্রাণই অন্যরকম। মন ভরে যায়। অন্তর থেকে দোয়া চলে আসে।
রিকসাচালক আনিসুল হক একইভাবে প্রশান্তির কথা বলেছেন। দিনমজুর লালমিয়া, ঠেলাগাড়ি চালক রফিক, ফেরিওয়ালা ছাত্তারসহ আরো কয়েকজন বলেন, যেগুলো দিয়ে ইফতার করি, এগুলো বড়লোকের খাবার।
মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম এর সাথে ইফতার আয়োজন সম্পর্কে কথা হলে তিনি জানান, ‘আরব দেশে এমন ইফতার সংস্কৃতি আমাকে খুব আকৃষ্ট করে। সে চিত্র দেখে ইচ্ছে ছিলো নিজের দেশে করার। সেই স্বপ্ন কিংবা ইচ্ছে থেকে গত বছর থেকে এই আয়োজন। তিনি বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিবারের চল্লিশজনের মতো সদস্য ইফতারে শৃঙ্খলায় কাজ করছেন। এক একদিন একেক রকম আইটেম থাকে। মঙ্গলবার মুরগি থাকলেও আজ বুধবার গরু জবাই করে আখনি হবে। পরের দিন করা হবে খাসির ব্যবস্থা। শেষ রমজান পর্যন্ত এই ইফতার অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
অনাথ অবহেলিত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য করা হলেও প্রতিদিন সুশীল সমাজের অনেকে সাধারণ মানুষের সারিতে বসে ইফতার করছেন। গেলো দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, এসপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদসহ অনেকেই সেখানে ইফতার করেছেন।
মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম বলেন, ভালো কিছু করার মধ্যে এক ধরনের সুখ থাকে। সেই সুখ অনেক দামি, আনন্দদায়ক।