আপন ঠিকানায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মার্চ ২০২৪, ৩:৫৫:৫০ অপরাহ্ন
ইউনুছ চৌধুরী :
সড়কের পাশের টিনশেডের জরাজীর্ণ ঘর থেকে অবশেষে নিজেদের স্থায়ী কার্যালয়ে যাচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। বহুল প্রত্যাশিত মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সুরম্য চার তলা ভবনটি শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজনেরাসহ সাধারণ মানুষ।
গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীর নুর ম্যানশনের পশ্চিম সংলগ্ন ৮ শতাংশ ভূমির উপরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মিত হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মরহুম এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী। আধুনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মিত চার তলা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৬টি করে স্টল, তৃতীয় তলায় থাকছে কার্যালয়ের দুটি অফিস ও সভা কক্ষ এবং চতুর্থ তলায় নামাজের স্থান। ভবনের সম্মুখভাগে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি।
জানা যায়, গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীর জকিগঞ্জ রোড সংলগ্ন জেলা পরিষদের পুকুর পাড়ে টিনশেডের একচালা ছাপড়া ঘরে ১৯৭৮ সালে শুরু হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও সেই ঘরেই চলছিলো উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনটির কার্যক্রম। একচালা জরাজীর্ণ এক কক্ষের অফিসেই বসতেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অতিথিদের বসতে দিতেই হিমশিম খেতো হতো। একটি বেড়ার পার্টিশন দিয়ে ছোট একটি অংশকে আলাদা করে অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, পুরো সিলেট জেলায় খেতাবপ্রাপ্ত ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ১৩ জন গোলাপগঞ্জ উপজেলার। উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪২৫ জন। অথচ জরাজীর্ণ ও সংকীর্ণ এক অস্থায়ী কক্ষে তাদের এতোদিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। এতে অনেক সময়ই সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতো না। এখন স্থায়ী ঠিকানায় নতুন ভবন পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ উপজেলার সচেতনমহল।
আলাপকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বাঘা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবেন্দ্র চন্দ ভবনটি নির্মিত হওয়ায় সন্তোষ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। যারা জীবিত আছেন তারাও বয়ো:বৃদ্ধ। নতুন ভবন নির্মিত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। এই আধুনিক স্থায়ী কার্যালয়টি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বদেশপ্রেম উদ্বুদ্ধকরণ, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এই স্থায়ী কার্যালয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও স্থায়ী কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।
ঢাকা দক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সাংবাদিক ফারহান মাসউদ আফছর বলেন, সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ, ভাতা বৃদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সর্বক্ষেত্রে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব আল মিঠুন বলেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। যাদের আত্মাত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম সেই সব সূর্য সন্তানের জন্য স্থায়ী কার্যালয় তৈরি হয়েছে। ভবনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম আরও প্রসারিত করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি ও সিলেট-৬ আসনের এমপি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি।