শোকের ছায়া, বিভিন্ন মহলের শোক
চলে গেলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এমপি নজির হোসেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২৪, ৫:১৬:৫৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, ‘ভাসান পানি আন্দোলন’র নেতা নজির হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ভোরে রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন শুভাকাক্সক্ষী রেখে যান। তার মৃত্যু সংবাদে সুনামগঞ্জ জেলা তথা রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
তার অনুজ বিশিষ্ট কবি ও লেখক ইকবাল হোসেন কাগজী জানান, দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার উত্তরার বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে।
এক সময়ের আলোচিত জনপ্রিয় এই বাম নেতা বিভিন্ন আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রাবস্থায় নজির হোসেন ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন । ১৯৬৬ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬৮ সালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করে কঠোর অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে সিলেট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন । ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ।
’৬৯ সালের শেষের দিকে সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির দায়িত্ব লাভ করে সুনামগঞ্জ মহকুমার গোপন কমিউনিস্ট সেলের প্রধান হন নজির হোসেন ৷ তিনি ১৯৭১ সুনামগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সহসম্পাক নিযুক্ত হন ৷ নজির হোসেনের উদ্যোগে টেকেরঘাট গেরিলা জোনটি গড়ে ওঠে ৷
১৯৭১ সালে জুনের প্রথম দিকে শিলং এর সানী হোটেলে কমরেড বরুণ রায়, পীর হাবিবুর রহমান, বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সরদার লতিফের উপস্থিতিতে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্তের আলোকে টেকেরঘাট সাব সেক্টর একটি গেরিলা যুদ্ধের জোন হিসেবে গড়ে ওঠে । সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সেক্টর কমান্ডার ও নজির হোসেন টেকেরঘাট সাব সেক্টরের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৭২ সালে তিনি সুনামগঞ্জ মহকুমা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন । ১৯৭৪ সালে ১৮ মাস ব্যাপী রাজনৈতিক পড়াশুনার জন্যে মস্কোতে ছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন এবং মোস্তাক সরকার বিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন ৷
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৫ সালে নিরাপত্তা আইনে ৬ মাস কারাবরণ করেন।
সুনামগঞ্জের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নজির হোসেন ১৫ দলীয় জোটের নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন । সুনামগঞ্জে জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভাসান পানির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবি থেকে ৮ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়ে নজির হোসেন প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হন । তিনি পঞ্চম সংসদের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন ৷ নজির হোসেন ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর বিএনপিতে যোগ দেন ।
তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৮ম সংসদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।
নামাজে জানাজা :
বৃহস্পতিবার বিকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রথম জানাজা এবং বিকেল সাড়ে ৫টায় গ্রামের বাড়ি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সকল দলের নেতা কর্মীদের জানাযায় অংশগ্রহণ :
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রথম জানাজায় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সহ হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন,সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন,পৌরসভার মেয়র নাদের বখত,সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন,সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর,বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী,জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী,জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আসাদুজ্জামান সেন্টু,জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডরভাকেট মল্লিক মইনুদ্দিন সুহেল,মোঃ সেলিম আহমদ,নাদীর আহমদ,রেজাউল হক,আবুল মনসুর মোহাম্মদ শওকত,অ্যাডভোকেট শেরেনুর আলী,ফারুক আহমদ,মোঃ আনসার উদ্দিন,সহ-সভাপতি মোঃ আনিসুল হক,যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহীন,সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল মোমেন সহ বিভিন্ন পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
শোক প্রকাশ :
বিশিষ্ট আইনজীবী ও কলামিস্ট হোসেন তওফিক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি হুমায়ূন মনজুর চৌধুরী, কবি ও গীতিকার ইশতিয়াক আহমদ রুপু, দৈনিক ইত্তেফাকের সিলেট ব্যুরো প্রধান হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, এডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু, সাংবাদিক খালেদ আহমদ, ক্রীড়া সংগঠক পারভেজ আহমদ, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সমপাদক পঙ্কজ দে, এডভোকেট খলিল রহমান প্রমুখ।