বিশ্বনাথ পৌর মেয়রের সংবাদ সম্মেলন
‘প্রভাবশালীদের ইন্ধনে দুই কাউন্সিলর পরিকল্পিতভাবে কাহিনী সাজিয়েছেন’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৪:০১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা নারী কাউন্সিলরের অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ দাবি করে বলেছেন, ‘পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম সম্পূর্ণ সাজানো তথ্য দিয়ে থানায় অভিযোগ জমা দিয়েছেন। বিশ্বনাথ থানা পুলিশ কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই সেটি নথিভুক্ত করেছেন। মূলত, রাস্তা নির্মাণের কাজে রাসনা ও তার সহযোগীদের চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় তারা এমন পরিকল্পিত কাহিনী সাজিয়েছেন। এতে প্রভাবশালী মহলের ইন্দন রয়েছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারে একটি হোটেলের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বক্তব্য দেন পৌর মেয়র মুহিব।
তিনি বলেন, ‘এই মামলা-মোকদ্দমা ও হয়রানির বিষয় নতুন নয়। যখনই কোনো নির্বাচন আসে তখনই একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার সমর্থিত প্রার্থীকে দুর্বল করার অপচেষ্টার অংশ এটি। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে তিনি শালিক পাখি মার্কার প্রার্থী শমসাদুর রহমান রাহিনকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুরো উপজেলায় তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। এ কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন শংকিত। বিশ্বনাথের লোকজন বিপুল ভোটে রাহিনকে বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
মেয়র মুহিবুর রহমানের অভিযোগ, ‘গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে তার পৌর এলাকার মিরেরচর গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের সামন থেকে কালিগঞ্জ সংযোগ রাস্তা হয়ে রামকৃষ্ণপুর পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছিল। এ অবস্থায় ঠিকাদার মুন্না হোসেনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে একটি পক্ষ। চাঁদা না দেওয়াতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং কর্মরত মিস্ত্রিদের হুমকি দেয়।’
বিষয়টি জানতে পেরে মেয়র, কয়েকজন কাউন্সিলর ও অন্যান্য লোকজন নিয়ে বিষয়টি তদন্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন কাউন্সিলর রাসনা বেগম ও কাউন্সিলর রফিক মিয়া দলবল নিয়ে মেয়রের গাড়ির গতিরোধ করে। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মেয়র ও তার লোকজনের উপর হামলার চেষ্টা চালায়। এসবের ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষিত আছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘রাসনা বেগম তার সেই অপকর্ম আড়াল করতে নতুন নাটক সাজিয়েছেন। যা তার হীন মনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।’
মেয়র তার বক্তব্যে দাবি করেন, ‘এই মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি একজন প্রার্থীকে সরাসরি সমর্থন প্রদান করার কারণেই ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
ঘটনার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, ‘আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. হেলাল মিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু প্রভাবশালী নেতাদের চাপের কারণে সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি।’
বক্তব্যে মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, ‘রাসনা বেগম তার সাজানো মামলার বিবরণে যেসব অপমানজনক দাবি জানাচ্ছেন তা আদৌ সত্য নয়। তার চুল ধরে টানা হেচড়ার প্রশ্নই ওঠে না। এসব কল্পকাহিনী তিনি সাজিয়ে আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছেন। এর পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তির ইন্ধন রয়েছে।’
মেয়র বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি গাড়ি থেকে নেমেছিলাম। কিন্তু তাদের অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে আমি পুনরায় গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছি।’
এ সময় মেয়র বলেন, ‘আমি এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করছি এবং সরকারি উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদানকারী এবং চাঁদাদাবিকারী ব্যক্তিদের যথাযথ আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
মুহিবুর রহমান জানান, এর আগে গত ১০ মার্চ পৌর পরিষদের কয়েকজন কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র পদে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান। পরে ২৪ মার্চ পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়। সভায় প্যানেল মেয়র-১ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এসবের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি কাউন্সিলর রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন অথবা আদালতে মামলা দায়েরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এসব কারণে রফিক মিয়া ও রাসনা বেগম সংঘবদ্ধভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজাচ্ছেন। আর পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন।
বিশ^নাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান এ বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাহিদুর রহমান রাহিন বলেন, সমাজ উন্নয়নে সাংবাদিকদের অবদান অনন্য। সাংবাদিকরা সত্য লেখনীর মাধ্যমে সমাজের অন্যায়-অসঙ্গতি তুলে ধরেন। বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাচনে যাতে অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে-সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।