পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা
বিশ্বনাথে আ.লীগের দুই পক্ষের ইটপাটকেল, আহত ১০
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ৩:২৩:৫৪ অপরাহ্ন
বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশ্বনাথে গতকাল রোববার পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে দু’পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে পথচারী ও নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ভাংচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও দোকানপাট। এ সময় বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কে প্রায় দু’ঘণ্টা যান চলাচল সম্পূর্ণরুপে বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি।
জানা গেছে, নবগঠিত বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলরদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চরম দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ পৌর মেয়র তার বাসার সম্মুখে বিশ্বনাথ পৌরসভার চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি সভা আহবান করেন। অন্যদিকে, বিশ্বনাথ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর রাসনা বেগমের উপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগ মেয়রের বাসার প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। বাদ জোহর তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে বিশ্বনাথ রামপাশা রোডস্থ সড়কে দু’পক্ষের সভাস্থলেই তাদের অনুসারীরা আসতে শুরু করেন। সময় যত বাড়তে থাকে লোক সমাগম তত বৃদ্ধি পেতে থাকে । কিন্তু, সভাগুলো শুরু হতে না হতেই আকস্মিকভাবে উভয় পক্ষের পক্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
এসময় মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং একাধিক কাউন্সিলর। অপরদিকে মেয়র মুহিবুর রহমানের বাসার দু’তলার ছাদ থেকেও তার অনুসারীরাও ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে বৃষ্টির মত ইট পাটকেল শুরু হয়। দু’পক্ষের মধ্যকার ইট পাটকেল নিক্ষেপের সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন, কয়েকটি দোকানপাট ও বিপুল চেয়ার ভাংচুর করা হয়। এক সময় পুলিশ এসে দু’পক্ষকে নির্বৃত্ত করে। পুলিশ যখন দু’পক্ষের মধ্যকার স্থানে অবস্থান করছিল; তখন রামপাশা রোড থেকে বিশ্বনাথ অভিমুখী মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ২ কাউন্সিলর ফজর আলী নিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। আর তখনই তার জিপ গাড়িকে ধাওয়া করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তখন তিনি কোনমতে, থানায় গিয়ে রক্ষা পান। তবে তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার সময় কাউন্সিলরের গাড়ীর ধাক্কায় এক বৃদ্ধা নারী’সহ দুজন আহত হন।
ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় মেয়রের পক্ষের আহত ইংরেজ আলী, সমুজ আলী, আনোয়ার আলী, পথচারী মরিয়ম বেগম ও আরিফুর রহমান সহ বেশ অন্তত ১০ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বনাথ পৌর শহরের অবস্থা এখনও থমথমে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক আব্দুল জলিল জালাল বলেন, পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাসনা বেগমের উপর হামলার প্রতিবাদে এবং পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের গ্রেফতার ও অপসারণের দাবীতে অনুষ্ঠিত পৌর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় মেয়র মুহিবুর রহমানের বাসা থেকে তার (মুহিব) পক্ষের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা তা প্রতিহত করেছি।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তিনি তার ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে গতকাল তার নির্ধারিত প্রতিবাদ সভায় ও তার বাসাতে হামলার ঘটনার জন্য উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছেন। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে পৌরসভার ‘দক্ষিণ মিরেরচর কমিউনিটি ক্লিনিক’ এলাকায় হামলার শিকার হন পৌরসভার ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।