রাজনগরের মধুর বাজারে দু’পক্ষের সংঘর্ষ
মৌলভীবাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিহত, আহত অর্ধশতাধিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২৪, ৬:৪৪:৩১ অপরাহ্ন
রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানা (৫০) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহত চেয়ারম্যান ছানা পাঁচগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর বাজারের মহেশ দাসের দোকান লুট করা হয়। এনিয়ে বাজারে উত্তেজনা ছিল। গতকাল শুক্রবার সকালে মধুর বাজারে লুটকারীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান মিয়ার ভাই ছুনু মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের দু’পক্ষের লোকজনের মধ্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রক্তা গ্রামের বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতানের নেতৃত্বে ও কেওলা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান মিয়া ও ছানা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মধুর বাজারে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। এতে উভয়পক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি বিনিময় হয়। এসময় উভয়পক্ষে অর্ধশতাধিক লোকজন গুলিবিদ্ধ ও ইটপাটকেলে আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ছানাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, খবর পেয়ে মৌলভীবাজার ও রাজনগরের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এদিকে, চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিবে বলে স্থানীয়রা শঙ্কা করছেন।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- আতিক (১৮), মহেষ দাস (৬০), রুহিত দাস (২২), লিটন দাস (২৩), অজিত দাস (২৬), হিমাংশু দাস (২৫), সুমন দাশ (২৫), সঞ্জিত দাস (৪৫), তারা মিয়া (৪২), দুরুদ মিয়া (৩০), মোক্তার মিয়া (৫৮), শাহজাহান (৩২), আওলাদ হোসেন (৫০), ফয়ছল আহমদ (২৯), সুলতান (৩২), আফান মিয়া (৩৫), বিপ্লব দাস (২৮), শহীদ মিয়া (৫০), লোকমান (৩৫), লিপুন মিয়া (৩৫), আজমল আলী (৫৫), লায়েক (৩৫), জিকু (২৬), জিলু (২৮), ভুট্টু (২৫), সোহেল (২৫), পাভেল (২২), মিনত (৫৫), দিলাবত (৩০), ইয়াবর (৩৬), নুরুল আমিন (২৮), তারিস আহমদ (৬০), জিতু (৬০), এরশাদ (৬০), দুলু মিয়া (৫০), কুনাই মিয়া (৫৫), আলম মিয়া (২৬), হুসাইন (২০), ইসলাম মিয়া (২০), নুরুল ইসলাম (২০), মাহিদ (১৫), মিন্টু (১৬), নাঈম (১৮), সুহেল (২০) সহ উভয়পক্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের রাজনগর, মৌলভীবাজার ও সিলেটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে।
নিহত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ছানার চাচাতো ভাই দেওয়ান মিয়া বলেন, আমার ভাইকে বিএনপি নেতা পিন্টু সুলতান গুলি করে মেরে ফেলেছে। তারা আমাদের সব দোকানপাট লুট করে নিয়ে গেছে।
অপরপক্ষের পিন্টু সুলতান বলেন, আমি আমার আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় সারমপুর ও কেওলার লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বাজারে এসে হামলা চালায়। পরে আমরা তাদের প্রতিহত করি।
সেনাবাহিনীর মৌলভীবাজার ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার হেলাল উদ্দিন বলেন, দুইপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ধারালো অস্ত্র, ইটপাটকেল ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছে। সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।