আবরার হত্যার দিনকে ‘জাতীয় নিপীড়ন বিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ৪:৩৬:১৬ অপরাহ্ন

‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন, ফ্যাসিবাদ
বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ছাত্রলীগের বিষদাঁত ভেঙে দিয়েছি’
ডাক ডেস্ক : ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নিপীড়নের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। দিনটিকে ‘জাতীয় নিপীড়ন বিরোধী দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার দাবি জানিয়েছে ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’ নামক একটি সামাজিক সংগঠন। গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত শহীদ আবরার ফাহাদের ৫ম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সংহতি সমাবেশ থেকে এই দাবি জানায় সংগঠনটি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবরার ফাহাদের ছোট ভাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ।
সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে মো. বরকত উল্লাহ বলেন, আমার সন্তানকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে। আবরারের মতো আর কেউ যাতে এ নির্যাতনের শিকার না হয়, কারো পিতামাতার বুক যাতে খালি না হয় সেজন্য সবাইকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করে তিনি বলেন, আবরার ফাহাদের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত যারা কারাগারে আছে তাদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করত হবে।
আবরার ফাইয়াজ বলেন, আবরার ফাহাদের রক্ত থেকে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে যাতে আর কাউকে আবরার ফাহাদ না হতে হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও সে ভারতে বসে এদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সে ওয়েস্টার্ন ও ভারতীয় মিডিয়াকে আমাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে জিহাদী অভ্যুত্থান বলে প্রচারের চেষ্টা করছে। আমরা বলতে চাই, এটা কোন জিহাদী অভ্যুত্থান ছিলো না, এটি ছিল জুলুমের বিরুদ্ধে মজলুমের অভ্যুত্থান। যারা দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে জুলুম কায়েম করেছিল, এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা তাদের কবর রচনা করেছি। ভবিষ্যতে যারা জুলুম কায়েমের চেষ্টা করবে তাদেরকে এদেশের ছাত্র-নাগরিক এক হয়ে রুখে দিয়ে জুলুমকে সমূলে উৎখাত করবে। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের সকল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে। আমরা অনেক শিক্ষক ও প্রক্টর দেখেছি যারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছে। ছাত্রলীগের হামলায় কেউ মরে গেলে সে হয় আবরার, আর যে বেঁচে যায় সে হয় শিবির। আজকে ছাত্রলীগ তুমি কোথায়, সাদ্দাম-ইনান তোমরা কোথায়? ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ছাত্রলীগের বিষদাঁত ভেঙে দিয়েছি।
নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’র মুখপাত্র রায়হান উদ্দীন বলেন, জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার মুক্ত এদেশে যেন আর কোন নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে, নতুন ফ্যাসিবাদের উত্থান যাতে না হয়। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখন্ডতার প্রশ্নে সবাইকে ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সংহতি সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হয়। এর পর জুলাই বিপ্লবে শহীদের স্মরণে এক মিনিটি নীরবতা পালন করা হয়। নিরাপদ বাংলাদেশ চাই এর মুখপাত্র রায়হান উদ্দীন এর সভাপতিত্বে সংহতি সমাবেশে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বজনীন ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনটির প্রতিনিধি বুয়েট শিক্ষার্থী আবদুন নূর তুষার। সমাবেশে শপথবাক্য পাঠ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক জাকারিয়া নিক্সন চৌধুরী।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ছাত্রসংগঠক ও প্রকাশক, আজিজুর রহমান আজাদ, একতার বাংলাদেশ এর মুখপাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহবায়ক আবদুল ওয়াহেদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উমামা ফাতেমা, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, ঢাবি সভাপতি আবু সাদিক কায়েম, বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল কায়েস পরাগ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সংহতি সমাবেশে শহীদ আবরার ফাহাদের শাহাদাত বার্ষিকীকে ‘জাতীয় নিপীড়ন বিরোধী দিবস’ হিসেবে ঘোষণার পক্ষে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১৮টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন সংহতি বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সমাবেশে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।