কী ঘটেছিলো পাঁচ বছর আগে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ৫:৩৯:২৮ অপরাহ্ন

বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যা
ডাক ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- এর ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড কে কেন্দ্র করে পাঁচ বছর আগে উত্তাল হয়ে উঠেছিলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। সেই সাথে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। এটি তখন শিরোনাম হয়েছিলো বিবিসিসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এর জের ধরেই তীব্র আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। এবার আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী যে আন্দোলন গড়ে ওঠেছিলো সেখানেও আন্দোলনকারীদের মিছিল, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও শ্লোগানে আবরার ফাহাদের নাম উঠে এসেছে বারবার। আওয়ামী লীগের পনের বছরের শাসনের সময় যে কয়েকটি ঘটনায় দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলো আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকে। একই সঙ্গে আবরার হয়ে ওঠেন ‘ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী’ আন্দোলনের একটি প্রতীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রোবায়েত ফেরদৌস বলছেন, আবরার হত্যাকাণ্ড জাতির ইতিহাসের একটি ‘বাক পরিবর্তনকারী’ ঘটনা। কারণ এর জের ধরেই বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়েছে এবং এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠছে। “আবরার হত্যাকাণ্ড একটি মাইলফলক ঘটনা, যে ঘটনার কারণে ক্ষমতাসীনদের প্রতি তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতির প্রতি চরম বিতৃষ্ণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো। তখন ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যে দাবি উঠেছিলো তাতে পুরো জাতির সমর্থন প্রকাশ পাচ্ছিলো। এ থেকেই ঘটনাটির গুরুত্বের গভীরতা আঁচ করা যায়। ভারত বিরোধিতার বিষয়টি আছে কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় হলো এটি সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন রোবায়েত ফেরদৌস। প্রসঙ্গত, ওই হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তীব্র বিক্ষোভের জেরে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আটক করে মামলা দেয়া হয়েছিলো। পরে ওই হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিলো ঢাকার একটি আদালত। তবে রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। গতকাল সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আপিল দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। সবশেষ চলতি বছর ৩ সেপ্টেম্বর আবরার ফাহাদের পরিবারকে দশ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
হত্যাকাণ্ডটি যেভাবে হয়েছিলো ২০১৯ সালের ৬ই অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ওই ঘটনার পর বিবিসির কাছে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিলেন তাতে বলা হয়েছিলো যে সেদিনই কুষ্টিয়ার বাড়ি থেকে বুয়েটে এসে শেরে বাংলা হলে নিজের ১০১১ কক্ষে এসেছিলেন আবরার। ফেসবুকে ভারত বিরোধী একটি পোস্টের জের ধরে রাত আটটার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পরে রাত তিনটার দিকে জানা যায় যে আবরারকে হত্যা করে একতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি ফেলে রাখা হয়েছে। পরে জানা যায় আবরারকে ‘শিবির আখ্যা’ দিয়ে দুই দফায় দুটি কক্ষে নিয়ে মারধর করা হয় এবং পরে বুয়েট মেডিকেলের ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে টহল পুলিশের একটি দল হল গেইটে গেলে তাদের হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে চারটার দিকে পুলিশ আবার হলে যায়। এরপর ডাক্তার মৃত ঘোষণার পর তারা মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় যে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে ঘটনাটির তদন্ত শেষে তখনকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সে সময় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন যে, আবরার ফাহাদকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করার বিষয়টি হত্যাকাÐের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল, কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়। “অভিযুক্তদের সমীহ করে সালাম না দেয়ার বিষয়টিও আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্যতম কারণ। তারা র্যাগিং-এর নামে আতংক তৈরি করেছে। হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তরা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে অন্যদের মাঝেও আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছিল, যাতে করে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদেরকে সমীহ করে এবং সালাম দেয়। অভিযুক্তরা বুয়েটে ‘ভয়ের রাজত্ব’ কায়েম করার ধারাবাহিকতায় আবরার ফাহাদের উপর হামলা করে,” মি. ইসলাম সেই সময় বলেছিলেন। পরে মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছিলো যে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সাথে ১১ জন সরাসরি সম্পৃক্ত এবং বাকিরা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলার এজাহারে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাসহ প্রথমে উনিশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তবে তদন্তের পরে আসামীর সংখ্যা দাঁড়ায় পঁচিশ জনে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি আল নাহিয়ান জয় বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘অনেক সময় অতি উৎসাহী কিছু নেতা-কর্মী ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এ ধরনের কার্যক্রমে লিপ্ত হন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের কার্যক্রম কোনোভাবে সমর্থন করা হবে না।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা।