জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত লাখাইয়ের দুই সহোদরের পরিবারের কান্না থামছে না
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৭:১২:৫৪ অপরাহ্ন
লাখাই (হবিগঞ্জ) খেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে লাখাই উপজেলার দুই সহোদরের মধ্যে ছোট ভাই মোনায়েল আহমেদ ইমরান (১৬) শহীদ হয়েছেন। আর বড় ভাই তোফায়েল (২১) আহত হয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অভ্যুত্থানের পাঁচমাস অতিবাহিত হলেও স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর পরিবারটি এখনো নির্বাক হয়ে পড়েছে। পুত্র শোকে পিতা ব্যবসা ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন।
লাখই উপজেলার কামলাপুর গ্রামের ছোয়াব মিয়ার ছেলে গুলিবিদ্ধ তোফায়েল ও শহীদ মোনায়েল আহমেদ ইমরান। নারায়ণগঞ্জ পার্ক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি বিষয়ে ৮ম সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী তোফায়েল জুলাইয়ের ১৮ তারিখ বিকেল ৩টায় ছাত্র জনতার সাথে সাইনবোর্ড মহাসড়ক দখলে নেয়। রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলো আন্দোলনকারীরা। এমন সময় মহাসড়কে পার্কিং করা কয়েকটি ট্রাকের আড়াল থেকে পুলিশ গুলি করা হয়। এতে ৭৯টি গুলি বিদ্ধ হয় তোফায়েলের শরীরে। প্রথমে তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় প্রো-এ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার শরীর থেকে মোট ৫৭টি গুলি বের করা হয়। এরপর ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ওই দিনই তার বাম হাতের শোল্ডার থেকে আরো একটি গুলি বের করা হয় অপারেশনের মাধ্যমে। শোল্ডারে পচন ধরায় কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়। এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে ২১টি গুলি।
এদিকে, ঢাকায় বেড়াতে আসা ছোট ভাই লাখাইয়ের জিরন্ডা মানপুর তোফায়েলিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ইমরান বড় ভাই তোফায়েলকে বাসায় রেখে পরদিন আন্দোলনে যোগ দেন। ২১ তারিখ সানারপাড় মোড়ে বেলা পৌনে ৩টার দিকে পুলিশের চাইনিজ রাইফেলের গুলি তার পেছন থেকে ভেদ করে বুকের সামনে দিয়ে বের হয়। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য রেফার্ড করেন। পথে রায়েরবাগে পুলিশ তাকে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়। এ্যাম্বুলেন্সে তার সাথে থাকা আন্দোলনকারীদের মারধর করার পাশাপাশি মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয় পুলিশ। প্রায় আধাঘন্টা আটকে রাখায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এক ভাই আহত ও অন্যজনকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছে পরিবারটি। পিতা ছোয়াব মিয়া ঢাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে থাকছেন। মায়ের কান্না থামছে না। দুই বোনের পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়েছে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন।
শহীদ ইমরানের বাবা বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের আশা ভরসা কিছু নেই। এখন আমরা মেয়েগুলো নিয়ে কি করবো জানি না। মেয়ে দুইটি পড়াশোনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। এখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসা পেলে আমার ছেলে তোফায়েল আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসত। স্থানীয়রা বলেন, পরিবারটি একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তোফায়েলকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া হলে পরিবারটি ঘুরে দাঁড়াতে পারতো।