নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
ব্রিটেনে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০১:২৮ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আসনে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। এবার নির্বাচনে ৪১২টি আসনে নিজেদের জয় তুলে নিয়েছে দলটি। ফলে বিরাট ব্যবধান তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে লেবার পার্টির। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য ৩২৬ আসনে জয় পেতে হয়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে গেল কনজারভেটিভ পার্টি।
এদিকে, ভূমিধস জয় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সরকারি বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে এরইমধ্যে প্রথম ভাষণও দিয়েছেন তিনি।
লেবার পার্টির এই নেতা বলেছেন, আমাদের দেশ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাজনীতিকে জনগণের সেবায় ফিরিয়ে দিয়েছে।
স্টারমার জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবেই পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে। ইটের পর ইট গাঁথার মতো করেই দেশ পুনর্গঠনে হাত দেয়ার কথা বলেছেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। স্কুল ও সহজলভ্য বাসস্থানের সুবিধা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন তিনি।
তিনি সরকারকে জনগণের সরকারে পরিণত করার ঘোষণাও দিয়েছেন।
বাকিংহাম প্যালেসে রাজার কাছে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর স্টারমার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ পেয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে যান।
সেখানে তিনি ভাষণের শুরুতেই দেশের প্রথম ব্রিটিশ-এশীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঋষি সুনাকের অর্জনের কথা তুলে ধরেন।
বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতি অনুসারে, গতকাল শুক্রবার কিয়ার স্টারমার রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় রাজা তাকে নতুন প্রশাসন গঠনের অনুরোধ করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, স্যার কিয়ার স্টারমার রাজার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও ফার্স্ট লর্ড অব দ্য ট্রেজারি হিসেবে নিয়োগের পর করমর্দন করেন।
প্রধানমন্ত্রীত্ব পাওয়ার পরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যস্ত হয়েছেন কিয়ের স্টারমার। উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অ্যাঞ্জেলা রায়নারকে বেছে নিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন ডেভিড ল্যামি। আর দেশটির প্রথম নারী চ্যান্সেলর হিসেবে ঘোষণা হয়েছে রাসেল রিভসের নাম।
দেশটির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইয়ভেট কুপারকে মনোনীত করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জন হিলি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং ও আইন মন্ত্রী হিসেবে শাবানা মাহমুদের নাম ঘোষণা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন ব্রিজেট ফিলিপসন এবং এড মিলিবেন্ড মনোনীত হয়েছেন জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে।
আজ শনিবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার বৈঠক বসবে।
নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হবে। আর দলটির নেতা প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হবেন।
৯ জুলাই নতুন পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ জুলাই রাজা তৃতীয় চার্লসের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।
কে এই কিয়ার স্টারমার?
রাজধানী লন্ডনের বাইরে সারেতে ১৯৬২ সালের ২ সেপ্টেম্বর একটি বামপন্থী শ্রমিক পরিবারে জন্ম কিয়ার স্টারমারের। জন্মের পরপরই লেবার পার্টির সঙ্গে যেন তার একটি যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায়। কারণ, তার নামকরণটি হয়েছিল স্কটিশ ট্রেড ইউনিয়নিস্ট কিয়ার হার্ডির নামানুসারে, যিনি লেবার পার্টির প্রথম নেতা ছিলেন।
স্টারমার তার পরিবারের প্রথম ¯œাতক। প্রথমে তিনি লিডস ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীতে অক্সফোর্ড থেকে আইন বিষয়ে পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। স্টারমার একজন মানবাধিকার আইনজীবী। যুক্তরাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউশন দপ্তরের পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ায় অবদান রাখায় ‘নাইট’ উপাধি পেয়েছেন স্টারমার।
খুব অল্প বয়স থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিয়ার স্টারমার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি যোগ দেন লেবার পার্টি ইয়ং স্যোশালিস্ট দলে। ২০২০ সালের এপ্রিলে লেবার পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন স্টারমার। জেরেমি করবিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। দায়িত্ব নিয়েই যুক্তরাজ্যের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন স্টারমার। কয়েক বছরের মাথায় ভোটের লড়াইয়ে এর সুফল পেলেন তিনি।
সমর্থকদের চোখে স্টারমার একজন বাস্তববাদী মানুষ। ভরসা করার মতো রাজনীতিবিদ। আর সমালোচকদের অনেকের মতে, স্টারমার চৌকস নন বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক।
লেবার পার্টির এ নেতা নিজেকে শ্রমিক শ্রেণির বলেই পরিচয় দেন। তার বেড়ে ওঠা সারের অক্সটেডে। তার বাবা ছিলেন টুলমেকার, মা নার্স, যিনি স্টিলস রোগে আক্রান্ত । হাঁটতে পারেন না। কথা বলতে পারেন না।
কিয়ার স্টারমার ২০১৫ সালে উত্তর লন্ডনের হোলবর্ন ও সেন্ট পানক্রাস থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিনের ফ্রন্টবেঞ্চ টিমে তার ছায়া ব্রেক্সিট মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ইইউ গণভোটের কথা বিবেচনা করা উচিত।
২০১৯ সালের নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর স্যার কিয়ার স্টারমার ২০২০ সালের এপ্রিলে দলের নেতা হন। তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া আলেকজান্ডার। যিনি এনএইচএসের একজন ওকুপেশনাল থেরাপিস্ট। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এদিকে রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নির্বাচনে জয়ী হতে জনগণের জন্য সরকারি সেবার মান কমে যাওয়া ও জীবনযাত্রার মান নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছেন স্টারমার। নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, লেবার পার্টি পরিবর্তন আনবে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তা থেকে শিগগিরই উত্তোলনের কোনো জাদুমন্ত্র তার কাছে নেই। সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে ৬১ বছর বয়সী এ আইনজীবীর জন্য।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশি সময় দুপুর ১২টা) শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা চলে টানা রাত ১০টা (বাংলাদেশি সময় রাত ৪টা) পর্যন্ত।